আদানি গ্রিন এনার্জি লিমিটেড (Adani Green) গুজরাটের কচ্ছ জেলার খাভদায় ৬৯২.৬ মেগাওয়াট নবায়নযোগ্য শক্তি প্রকল্প চালু করেছে। এই প্রকল্পগুলোর মধ্যে শনিবার ৪৮০.১ মেগাওয়াট সৌর ও বায়ু শক্তি ক্ষমতা এবং শুক্রবার আদানি রিনিউয়েবল এনার্জি ফিফটি সেভেন লিমিটেডের অধীনে ২১২.৫ মেগাওয়াট সৌর প্রকল্প চালু হয়েছে। এর ফলে আদানি গ্রিনের মোট কার্যকরী নবায়নযোগ্য শক্তি উৎপাদন ক্ষমতা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১৪,২১৭.৯ মেগাওয়াটে। সংস্থাটি জানিয়েছে, প্রয়োজনীয় অনুমোদন পাওয়ার পর এই প্রকল্পগুলো চালুর সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে এবং রবিবার থেকে বিদ্যুৎ উৎপাদন শুরু হয়েছে।
নতুন চালু হওয়া প্রকল্পগুলোর মধ্যে রয়েছে বিভিন্ন সহায়ক সংস্থার অধীনে সৌর ও বায়ু শক্তি কেন্দ্র। আদানি রিনিউয়েবল এনার্জি ফিফটি সিক্স লিমিটেড ১২৫ মেগাওয়াট সৌর প্রকল্প, আদানি রিনিউয়েবল এনার্জি ফর্টি ওয়ান লিমিটেড ৬৫.৬ মেগাওয়াট বায়ু শক্তি প্রকল্প, আদানি রিনিউয়েবল এনার্জি ফিফটি সেভেন লিমিটেড ৩৭.৫ মেগাওয়াট সৌর প্রকল্প, আদানি গ্রিন এনার্জি টুয়েন্টি ফোর লিমিটেড ৫২ মেগাওয়াট বায়ু শক্তি ক্ষমতা এবং আদানি গ্রিন এনার্জি টুয়েন্টি ফোর এ লিমিটেড ২০০ মেগাওয়াট সৌর প্রকল্প চালু করেছে। এই প্রকল্পগুলো আদানি গ্রিনের সম্পূর্ণ মালিকানাধীন সহায়ক সংস্থাগুলোর মাধ্যমে পরিচালিত হচ্ছে।
খাভদা: বিশ্বের বৃহত্তম নবায়নযোগ্য শক্তি কেন্দ্র
আদানি গ্রিন গুজরাটের কচ্ছ জেলার খাভদায় ৩০,০০০ মেগাওয়াট (৩০ গিগাওয়াট) ক্ষমতার বিশ্বের বৃহত্তম নবায়নযোগ্য শক্তি কেন্দ্র গড়ে তুলছে। এই প্রকল্পটি ৫৩৮ বর্গকিলোমিটার জুড়ে বিস্তৃত, যা প্যারিসের আয়তনের পাঁচ গুণ এবং মুম্বইয়ের প্রায় সমান। সম্পূর্ণ হলে এটি শুধু নবায়নযোগ্য শক্তির ক্ষেত্রেই নয়, সমস্ত শক্তি উৎসের মধ্যে বিশ্বের বৃহত্তম বিদ্যুৎ কেন্দ্র হয়ে উঠবে। খাভদার এই প্রকল্পে সৌর ও বায়ু শক্তির সমন্বয়ে হাইব্রিড প্রযুক্তি ব্যবহার করা হচ্ছে, যা দিনের বেলা সৌরশক্তি এবং সন্ধ্যায় বায়ু শক্তি উৎপাদন করবে। এই উদ্যোগ ভারতের ২০৩০ সালের মধ্যে ৫০০ গিগাওয়াট নবায়নযোগ্য শক্তি ক্ষমতা অর্জনের লক্ষ্যে একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ।
এই প্রকল্পে আদানি গ্রিন ১.৫ লক্ষ কোটি টাকা বিনিয়োগ করছে। সংস্থাটি জানিয়েছে, খাভদার বায়ু ও সৌর সম্পদ ভারতের মধ্যে অন্যতম শ্রেষ্ঠ। এখানে বছরে ২,০৬০ কিলোওয়াট ঘণ্টা প্রতি বর্গমিটার সৌর বিকিরণ এবং ৮ মিটার প্রতি সেকেন্ড গতির বায়ু পাওয়া যায়। এই প্রাকৃতিক সুবিধার পাশাপাশি আদানি গ্রিন জলবিহীন রোবোটিক পরিচ্ছন্নতা ব্যবস্থা ব্যবহার করছে, যা কচ্ছের শুষ্ক অঞ্চলে পানি সংরক্ষণে সহায়তা করছে এবং শক্তি উৎপাদন বাড়াচ্ছে।
উত্তরপ্রদেশে ৪০০ মেগাওয়াট সৌরশক্তি সরবরাহ
একটি পৃথক উন্নয়নে, আদানি গ্রিনের সম্পূর্ণ মালিকানাধীন সহায়ক সংস্থা আদানি রিনিউয়েবল এনার্জি হোল্ডিং টুয়েলভ লিমিটেড উত্তরপ্রদেশে ৪০০ মেগাওয়াট সৌরশক্তি সরবরাহের জন্য একটি চুক্তি পেয়েছে। উত্তরপ্রদেশ পাওয়ার কর্পোরেশন লিমিটেড (ইউপিপিসিএল) থেকে এই চুক্তির আওতায় রাজস্থানে একটি গ্রিড-সংযুক্ত সৌর প্রকল্প থেকে ২৫ বছর ধরে প্রতি কিলোওয়াট ঘণ্টায় ২.৫৭ টাকা হারে বিদ্যুৎ সরবরাহ করা হবে। শুক্রবার একটি স্টক এক্সচেঞ্জ ফাইলিংয়ে এই তথ্য জানানো হয়েছে।
অন্যান্য প্রকল্প: ভদলা ও ফতেহগড়
আদানি গ্রিন শুধু খাভদায় নয়, রাজস্থানেও নবায়নযোগ্য শক্তি প্রকল্পে কাজ করছে। জোধপুরের ভদলায় ৫০০ মেগাওয়াট ক্ষমতার একটি সৌর পার্ক এবং জয়সলমেরের ফতেহগড়ে ১,৫০০ মেগাওয়াট ক্ষমতার আরেকটি সৌর পার্ক তৈরি করছে। ফতেহগড় সৌর পার্কটি ৯,৯৮১ একর জমির উপর বিস্তৃত এবং সম্পূর্ণ হলে এর মোট ক্ষমতা ১,৫০০ মেগাওয়াট হবে। এই প্রকল্পগুলো আদানি গ্রিনের ২০৩০ সালের মধ্যে ৪৫,০০০ মেগাওয়াট (৪৫ গিগাওয়াট) লক্ষ্যে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে।
পরিবেশগত ও সামাজিক প্রভাব
খাভদার প্রকল্পটি সম্পূর্ণ হলে প্রতি বছর ১৬.১ মিলিয়ন বাড়িতে বিদ্যুৎ সরবরাহ করতে পারবে এবং ৫৮ মিলিয়ন টন কার্বন ডাই অক্সাইড নির্গমন রোধ করবে। এছাড়া, এটি ১৫,২০০টিরও বেশি সবুজ কর্মসংস্থান সৃষ্টি করবে। আদানি গ্রিনের এই উদ্যোগ ভারতের কার্বন নিরপেক্ষতার লক্ষ্যে একটি বড় পদক্ষেপ। সংস্থাটি এআই/এমএল প্রযুক্তি-সংযুক্ত এনার্জি নেটওয়ার্ক অপারেশন সেন্টার (ইএনওসি) ব্যবহার করে রিয়েল-টাইম পর্যবেক্ষণ করছে, যা শক্তি উৎপাদনের দক্ষতা বাড়াচ্ছে।
ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা
আদানি গ্রিনের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ভিনিত জৈন জানিয়েছেন, “খাভদায় বর্তমানে ২ গিগাওয়াট উৎপাদন সম্পন্ন হয়েছে। চলতি আর্থিক বছরে (২০২৪-২৫) আরও ৪ গিগাওয়াট যোগ করার পরিকল্পনা রয়েছে, যা মার্চ ২০২৫-এর মধ্যে মোট ৬ গিগাওয়াটে পৌঁছাবে। এরপর প্রতি বছর ৫ গিগাওয়াট করে যোগ করা হবে।” তিনি আরও বলেন, “আমরা ২০৩০ সালের মধ্যে ৪৫ গিগাওয়াট এবং দীর্ঘমেয়াদে ৫০ গিগাওয়াট ক্ষমতা অর্জনের লক্ষ্যে কাজ করছি।”
বাজারে প্রভাব
শুক্রবার স্টক এক্সচেঞ্জে আদানি গ্রিনের শেয়ার মূল্য ১.২৪% কমে ৯৪৮ টাকায় শেষ হয়েছে। তবে গত এক মাসে শেয়ার মূল্য ২২.৪% বেড়েছে। বিশ্লেষকরা মনে করছেন, এই নতুন প্রকল্পগুলো সংস্থার বাজারে অবস্থানকে আরও শক্তিশালী করবে।
আদানি গ্রিন এনার্জি ভারতের নবায়নযোগ্য শক্তি খাতে নেতৃত্ব দিচ্ছে। খাভদা, ভদলা এবং ফতেহগড়ের মতো গিগা-স্কেল প্রকল্পগুলো শুধু শক্তি উৎপাদনই নয়, পরিবেশ সংরক্ষণ এবং অর্থনৈতিক উন্নয়নেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে। এই উদ্যোগগুলো ভারতকে একটি সবুজ ভবিষ্যতের দিকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছে।